মাছ চাষে সাফল্যের জন্য নতুন পণ্য – জামি, মাশা ও তাযিজ

মাছ ও চিংড়ি চাষে চাষী ভাইদের সাফল্য নিশ্চিত করতে ইনতেফা সরবরাহ করছে কার্যকরী পণ্যসামগ্রী। মাছ ও চিংড়ি চাষে সাফল্যের অন্তরায় হল দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মাছ ও চিংড়ি এবং চাষের অনুপযুক্ত পরিবেশ। এতে জলাশয়ে বিভিন্ন সমস্যার উৎপত্তি হয় ও সর্বোপরি মাছ ও চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার কমে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। এসকল সমস্যার সমাধানে ইনতেফা’র পণ্যতালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন তিনটি পণ্য- জামি, মাশাতাযিজ

জামি প্রোবায়োটিক ও ইউকা সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক জিওলাইট, যা পুকুর ও ঘেরের মাটি ও পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ করে। জামি হল মাছচাষের সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধান, যাতে Yucca schidigera (ইউকা সিডিজেরা) গাছের নির্যাসের পাশাপাশি উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যেমন- Bacillus subtilisBacillus licheniformis, এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান, যেমন- SiO2, Al2O3, Na2O, CaO, MgO, Fe2O3, K2O, Mn ইত্যাদি আছে।
মাছের ত্যাগকৃত মল-মূত্র, অব্যবহৃত মৎস্য খাদ্য, গাছের পাতা ও অন্যান্য মৃত উদ্ভিদ বা প্রাণী, মাছের শরীর নিঃসৃত অতিরিক্ত মিউকাস ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে পঁচে গিয়ে পুকুরে অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট, নাইট্রেট, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন ইত্যাদি নানা ক্ষতিকর ও বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করার পাশাপাশি পুকুরের পিএইচ (pH) মান অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে। ফলে মাছ ও চিংড়ির জলাশয়ের পরিবেশ চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

জামি-তে উপস্থিত ইউকা নির্যাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে Saponin Steroid ও Glycocomponent থাকে যা উপরোক্ত গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ করে পুকুরের পরিবেশ মাছচাষের উপযোগী করে তোলে। জামি-তে থাকা বিভিন্ন খনিজ পদার্থ পুকুর বা ঘেরের তলদেশের জৈব বর্জ্য শোধন করার মাধ্যমে মাটি ও পানির দূর্গন্ধ দূর করে এবং পুকুরে pH এর ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও পুকুরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের যোগান নিশ্চিত করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাবার ও দ্রবীভূত অক্সিজেন তৈরি হয়। Bacillus subtilisBacillus licheniformis বিভিন্ন জৈব পদার্থকে বায়বীয় পদ্ধতিতে ভেঙ্গে নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে মুক্ত করে দেয়, এতে পুকুরের ক্ষতিকর গ্যাস দূর হওয়ার পাশাপাশি এসব ক্ষতিকর গ্যাসের উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও জলাশয়ের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস ও অণুজীবের বৃদ্ধি রোধ হয়। ফলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগ সংক্রমণের হার হ্রাস পায়।

পুকুরের পরিবেশ মাছ চাষের উপযোগী রাখতে প্রতি ৩৩ শতকে ৩ ফিট পানির জন্য পুকুর প্রস্তুতির সময় ২.৫-৩ কেজি জামি এবং চাষকালীন সময়ে ২ কেজি জামি প্রতি ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে। সকালে বা বিকালে পরিমাণমত জামি ২০ লিটার পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে সম্পূর্ণ পুকুরে ছিটিয়ে দিন। প্রয়োজনে মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

মাশা সম্পূরক খাদ্যের গুণগত মান বৃদ্ধিতে এবং মাছ ও চিংড়ির দ্রুত ওজন বাড়াতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যন্ত কার্যকর একটি গ্রোথ প্রমোটর। মাশা-তে রয়েছে সঠিক অনুপাতে মাছ ও চিংড়ির বৃদ্ধি সহায়ক প্রয়োজনীয় ৬টি অ্যামাইনো এসিড (আর্জিনিন, ফিনাইল অ্যালানিন, ট্রিপ্টোফেন,
গ্লাইসিন, এল-লাইসিন ও ডি এল-মিথিওনিন), প্রয়োজনীয় ৭টি ভিটামিন (ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি-৩), ইনোসিটোল, বিভিন্ন খনিজ উপাদান এবং খাদ্য আকর্ষকের কার্যকরী মিশ্রণ।

মাছ ও চিংড়ির দ্রুত ও স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নির্ভর করে মূলত বিভিন্ন প্রকার অ্যামাইনো এসিডের প্রাপ্যতা ও কার্যকারিতার উপর। মাশা-তে অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড, যেমন- এল-লাইসিন, ডি এল-মিথিওনিন, ট্রিপ্টোফেন, ফিনাইল অ্যালানিন ইত্যাদি থাকায় মাছ ও চিংড়ির দেহের ক্ষয়পূরণ হওয়ার পাশাপাশি দেহে মাংসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে পুকুরে মাছের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের কার্যকরী মিশ্রণ থাকায় মাশা প্রয়োগে মাছ ও চিংড়ির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুগঠিত হয়, কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ, যেমন- শ্বসন, খাদ্য হজম প্রক্রিয়া ইত্যাদি ত্বরান্বিত হয়। এছাড়াও খাদ্য আকর্ষক ও ইনোসিটোল থাকায় মাছ ও চিংড়ির ক্ষুধামন্দা দূর হয় এবং খাদ্য গ্রহণের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। এভাবে মাশা প্রয়োগ করে সম্পূরক খাদ্যের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে মাছ ও চিংড়ির শারীরিক বৃদ্ধির হার বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। ফলে মাছের উৎপাদন সময়কাল কমানোর মাধ্যমে খাদ্যের খরচ কমিয়ে এনে অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশী লাভবান হওয়া যায়।

মাছ ও চিংড়ির দ্রুত ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য প্রতি কেজি খাবারে ৫-৭ মিলি হারে টানা ৫ দিন মাশা প্রয়োগ করতে হবে। ৫ দিন খাওয়ানোর পর ৭ দিন বিরতি দিতে হবে। এভাবে ৭ দিন পর পর টানা ৫ দিন নিয়মিত মাশা খাওয়াতে হবে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার পর প্রতি কেজি খাবারে ৭-১০ মিলি হারে মাশা প্রয়োগ করলে মাছ ও চিংড়ি রোগকালীন দূর্বলতা কাটিয়ে উঠবে এবং ক্ষয় পূরণের মাধ্যমে পুনরায় স্বাভাবিক চঞ্চলতা ও কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। প্রতি কেজি খাবারে ১০ মিলি হারে মাশা প্রয়োগ করলে রেণু মাছের চঞ্চলতা ও উজ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি রেণুর মৃত্যুহার হ্রাস পায়। পরিস্থিতি অনুযায়ী মাশা-র প্রয়োগমাত্রা কম বা বেশী হতে পারে।

তাযিজ প্রতিকুল পরিবেশে মাছ ও চিংড়ির ধকল কাটিয়ে উঠতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রস্তুতকৃত এল-অ্যাসকরবিক এসিড ও এল-গুলোনোল্যাকটোন অক্সিডেজ সমৃদ্ধ ৯৯% অ্যাসকরবিক এসিড, যা বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য ভিটামিন সি এর তুলনায় অধিক কার্যকর।

পুকুরের পানির তাপমাত্রার অতিরিক্ত তারতম্য হলে, বিশেষতঃ প্রখর সূর্যালোক বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় মাছের শরীরে ধকল পড়ে। এছাড়াও অধিক ঘনত্বে চাষ, পরিবহনজনিত ধকল, পানিতে অতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি, অক্সিজেনের স্বল্পতা বা ঘাটতি, পানির পিএইচ (pH) এর মান খুব কম বা বেশী হওয়া, রোগের আক্রমণসহ নানাবিধ প্রতিকূলতা মাছের শরীরে ধকলের কারণ হতে পারে। তাযিজ-এ উপস্থিত এল-অ্যাসকরবিক এসিড হল অ্যাসকরবিক এসিডের একটি বিশেষ অবস্থা (Ready Form), যা মাছ ও চিংড়িকে অতি দ্রুত এই সকল ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

অনেক সময় ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত কারণে মাছের চোখ, অস্থি ও তরুণাস্থিতে ক্ষত হয় এবং স্পাইনাল লর্ডোসিস ও স্কলোসিসের ফলে হাড়ের গঠনে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হওয়ায় মাছের মেরুদন্ড বেঁকে যায়। ভিটামিন সি-এর অভাবে চিংড়ির খোলস নরম হয়ে যায়, খোলস পরিবর্তন অসম্পূর্ণ থাকে, মাথা বড় হয় ও মাংসপেশী ঘোলাটে হয়ে যায়। এছাড়াও মাছ ও চিংড়ির ফুলকায় হাইপারপ্লাসিয়া দেখা দেয়, পাশাপাশি ক্ষুধামন্দার ফলে মাছ ও চিংড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। তাযিজ-এ প্রাপ্ত অ্যাসকরবিক এসিড এবং এল-অ্যাসকরবিক এসিড মাছ ও চিংড়িকে এসকল রোগ হতে সুরক্ষা দান করে এবং সর্বোপরি মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও তাযিজ-এ রয়েছে এল-গুলোনোল্যাকটোন অক্সিডেজ নামক এক ধরনের বিশেষ এনজাইম, যা মাছের শরীরে ভিটামিন সি সংশ্লেষণ বা তৈরি করতে সহায়তা করে। এভাবে তাযিজ মাছ ও চিংড়ির শরীরে অত্যন্ত কার্যকর এবং স্থায়ীভাবে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাছ ও চিংড়ির সুস্থ ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

মাছ ও চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রতি কেজি খাবারে ২-৩ গ্রাম হারে তাযিজ মাসে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতি কেজি খাবারে ৫-৭ গ্রাম হারে তাযিজ প্রয়োগ করলে দ্রুত রোগমুক্তি ঘটে। রেণু মাছের প্রস্ফুটন হার বাড়াতে এবং মৃত্যুহার কমাতে প্রতি টন পানিতে ০.৫-১ গ্রাম হারে তাযিজ প্রয়োগ করুন।