কলা চাষে সফলতা পেতে করণীয়

একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। কিন্তু আমরা পাই মাত্র ৭০-৮০ গ্রাম। দেশের চাহিদার তুলনায় ফলের উৎপাদন কম হওয়ায় এবং বিদেশী ফলের উচ্চ মূল্যের কারণে দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া দেশী ফলের মোট উৎপাদনের ৭০ ভাগই মে, জুন ও জুলাই- এই তিন মাসে উৎপাদিত হয়। তাই বছরের বাকী সময় ফলের অভাব প্রকট থাকে। অতি খাদ্যমান সমৃদ্ধ, জনপ্রিয়, সুস্বাদু এবং দামে সস্তা ফল কলা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কলা চাষে বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণে যে ক্ষতি হয়ে থাকে তার ৯০ ভাগ ক্ষতিই হয় মাত্র দুইটি রোগ ও একটি পোকার দ্বারা। নিয়ে এই রোগ ও পোকার আক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

কলার সিগাটোকা রোগ

সিগাটোকা (Sigatoka)
Cercospora musae নামক এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। রোগের আক্রমণে প্রথমে গাছের তৃতীয় বা চতুর্থ পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। দাগগুলি ক্রমে বড় হয়ে বাদামি রং ধারণ করে। অনেকগুলি দাগ একত্রে মিলে বড় দাগের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে পাতা পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়।
প্রতিকার
রোগাক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। মাটিতে ইউরিয়া বা নাইট্রোজেন সার কম এবং পটাশ সার বেশী ব্যবহার করতে হবে। জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল থাকতে হবে। রোগ দেখা দেয়া মাত্র প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি সাদিদ মিশিয়ে ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী হলে প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম দিফা মিশিয়ে ৭ দিন পরপর স্প্রে করুন।

পানামা (Panama)

কলার পানামা রোগ

Fusarium oxysporum নামক এক ধরণের ছত্রাক এ রোগের জন্য দায়ী। এই রোগের আক্রমণে প্রথমে নিচের পুরাতন পাতা হলুদ হয়ে যায়। পরে কচি পাতাও হলুদ হয়। ধীরে ধীরে গাছের মাইজ পাতা ছাড়া সকল পাতা বোটা থেকে ভেঙ্গে গাছের সাথে ঝুলে থাকে। গাছের কান্ড ফেটে যায়। গাছ কাটলে কান্ডের মধ্যে কালো দাগ দেখা যায়।
প্রতিকার
এ রোগ লেগে গেলে তা দমন করা প্রায় অসম্ভব। তাই এই রোগ যাতে না লাগে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে দুই লিটার পানিতে ২ গ্রাম হাদাক মিশিয়ে শেষ চাষের আগে সমস্ত জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করে মাটি শোধন করে নিতে হবে। চারা লাগানোর পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হাদাক মিশিয়ে সেই পানিতে চারার গোড়া ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে তারপর লাগাতে হবে। প্রতি দুই মাস পরপর একরে ৬ কেজি হারে ফানা প্রয়োগ করতে হবে (সেচ দেওয়ার পূর্বে)।

কলার বিটল পোকা

কলার বিটল পোকা

বিটল পোকা কলার কচিপাতা ও কচি ফলের ক্ষতি করে থাকে । এরা কচি পাতার উপরের সবুজ অংশ কুরে কুরে খায়। এরপর মোচা থেকে কলা বের হবার সময় কচি কলায়ও একই ধরনের ক্ষতি করে থাকে। কলা বড় হবার সাথে সাথে কুরে খাওয়া দাগ স্পষ্ট হয়। ফলে কলার বাজার মূল্য কমে যায়।
প্রতিকার
কলার চারা লাগানোর দুই মাস পর থেকে প্রতি ১৫-২০ দিন পরপর প্রতি লিটার পানিতে ১-২ মিলি জুবাস অথবা জাহিম স্প্রে করতে হবে। মোচা বের হবার ১ সপ্তাহ পূর্ব থেকে মোচা থেকে সম্পূর্ণ কলার ছড়ি বের হওয়া পর্যন্ত ৭ দিন পরপর স্প্রে দিতে হবে। এছাড়া কলার অধিক ফলন পেতে প্রতি ১৬ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম টোপাজ চিলেটেড প্লাস ও ০.৫ গ্রাম জাদা মিশিয়ে কলা সংগ্রহের ৪৫ দিন পূর্বে একবার এবং ৩০ দিন পূর্বে দ্বিতীয়বার সমস্ত পাতা ও কলার কাঁদিতে ভালোভাবে স্প্রে করুন।