মাছচাষে বহিঃপরজীবির আক্রমণ ও সমাধান

হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগলসহ প্রায় সকল গবাদিপশুর মতই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিচিত্র প্রজাতির পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি বর্তমানে মাছ চাষের অন্যতম প্রধান একটি প্রতিবন্ধকতা। সাধারণত মাছে দুই ধরনের পরজীবি দেখা দেয়- অন্তঃপরজীবি ও বহিঃপরজীবি। অন্তঃপরজীবি মাছের অভ্যন্তরে পাকস্থলী ও অন্ত্রে বসবাস করে, যেমন- মাছের বিভিন্ন ধরণের কৃমি। পক্ষান্তরে, বহিঃপরজীবি মাছের শরীরের পাখনা, ত্বক ও ফুলকায় বসবাস ও পুষ্টি শোষণ করে থাকে। মাছের বিভিন্ন বহিঃপরজীবির মধ্যে উকুন, হাঁসপোকা, মাখনপোকা, সুজিপোকা, নোঙ্গরকৃমি (Anchor Worms) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসকল বহিঃপরজীবি মাছচাষে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি মাছের উৎপাদনক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস করে।

অধিক ঘনত্বে মাছচাষ, অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ, পুকুরের পাড় ও এর আশপাশে ঝোপঝাড়ের উপস্থিতি, একই জাল জীবাণুমুক্ত না করে একাধিক পুকুরে ব্যবহার, অধিক তাপমাত্রা, পুকুরে অতিরিক্ত জৈব পদার্থের উপস্থিতি, পুকুরের তলদেশে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার প্রভাব, অনিয়ন্ত্রিত পিএইচ (pH) ইত্যাদি নানাবিধ অব্যবস্থাপনা ও অসচেতনতার কারণেই মূলত পুকুরে বিভিন্ন ধরনের পরজীবির আক্রমণ দেখা যায়।

মাছে বহিঃপরজীবি ঘটিত সমস্যাসমূহ

পরজীবিরা মাছের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত ও অন্যান্য রক্তরস (Body fluid) শোষণ করে।
মাছ রক্ত স্বল্পতায় ভোগে এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।
মাছের শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
ওইসব ক্ষতস্থানে পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস ইত্যাদির সংক্রমণ দেখা যায়।
অনেক সময় পরজীবিরা পুষ্টির জন্য মাছের সাথে প্রতিযোগিতা করে, ফলে মাছ পুষ্টিহীনতায় ভোগে।
কিছু কিছু পরজীবি, যেমন- সুজিপোকা পরিমাণে অনেক বেড়ে গেলে পুকুরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
পুকুরে পরজীবির আক্রমণের ফলে মাছের শরীরে নানাবিধ ধকল পড়ে ও মাছের শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায়।
কিছু কিছু পরজীবি মাছের রেণু ও পোনাকে সরাসরি শিকার বা আক্রমণ করে, ফলে মাছ মারা যায়।

মাছচাষে বহিঃপরজীবি ঘটিত এসকল সমস্যার সমাধানে সর্বাপেক্ষা কার্যকর সমাধান হল ডেল্টামেথ্রিন ২.৮ ইসি সমৃদ্ধ ইনতেফা কোম্পানীর দাহাদাহা-তে উপস্থিত ডেল্টামেথ্রিন একাধারে স্পর্শক ও পাকস্থলীনাশক অর্থাৎ এটি বহিঃপরজীবির শরীরের সংস্পর্শে আসামাত্র যেমন একে মেরে ফেলে, তেমনি পরজীবির পেটে যাওয়ামাত্র একে ধ্বংস করে।

অনেক পরজীবির শরীরে শক্ত আবরণ (কিউটিকল) থাকার কারণে এদের সহজে দমন করা যায় না। তদুপরি, পুকুরে অনেক সময় পরজীবির সিস্ট (ডিম) থাকে, ফলে পুকুরের বহিঃপরজীবি পুরোপুরিভাবে দমন করা যায় না। দাহা-তে কার্যকরী উপাদান ডেল্টামেথ্রিন থাকায় এটি লাইপোফিলিক। সুতরাং এটি বহিঃপরজীবির কিউটিকল খুব সহজেই ভেদ করে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে বাজারের অন্যান্য পরজীবিনাশকের তুলনায় দাহা পরজীবি ও সিস্ট উভয়ের বিরুদ্ধেই অধিক শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি পরজীবির জীবনকালের যে কোন পর্যায়ে সমানভাবে কার্যকর।

জলাশয়ে নিয়মিত দাহা প্রয়োগ করার ফলে-

জলাশয়ে উপস্থিত উকুন, হাঁসপোকা, মাখনপোকা, সুজিপোকা, কৃমিসহ যাবতীয় বহিঃপরজীবি দমন হয়।
মাছের বিভিন্ন ছত্রাকঘটিত রোগ, যেমন- সাদা তুলা রোগ (Saprolegniasis) প্রতিরোধ করে।
জলাশয়ে মাছের ক্ষতিকর বিভিন্ন জুপ্লাঙ্কটন দূর হয়।
মাছের শরীরের অতিরিক্ত পিচ্ছিল পদার্থ দূর হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে জলাশয় পরজীবি মুক্ত থাকে।

বহিঃপরজীবি দমনের লক্ষ্যে ৩৩ শতাংশ জলাশয়ে ৩ ফিট পানির জন্য ১৭ মিলি হারে প্রতিমাসে অন্তত ০১ বার দাহা ব্যবহার করা উচিত। যদি কোন কারণে পুকুরে পরজীবির আক্রমণ দেখা দেয়, তবে ৩৩ শতাংশ জলাশয়ে ৩ ফিট গভীর পানির জন্য ৩৩ মিলি দাহা প্রয়োগ করুন। অধিক কার্যকারিতার জন্য দাহা প্রথমবার ব্যবহারের ৭-১০ দিন পর পুনরায় ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজনে মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করুন।

চিংড়ি নিজেও একটি পোকা হওয়ায় চিংড়ির ঘেরে দাহা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।