আমের রোগসমূহ ও প্রতিকার

বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলসমুহের মধ্যে আম অন্যতম। স্বাদে, গন্ধে ও তৃপ্তি প্রদানে আম অতুলনীয়, তাই আমকে ‘ফলের রাজা’ বলা হয়। আমাদের দেশে আমের ফলন বেশ কম, হেক্টর প্রতি মাত্র ৪ টন। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রায় ১০ টন। ফলন কম হওয়ার কারণ অনেক, তবে রোগ বালাই সব চেয়ে বেশী ক্ষতি করে থাকে বলে ধারণা করা হয়। আমের উৎপাদন বাড়াতে হলে রোগ দমন অপরিহার্য। তাই আমাদের দেশে আমের প্রধান রোগসমুহ ও প্রতিকার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

এনথ্রাকনোজ (Anthracnose)
রোগের লক্ষণঃ এ রোগের আক্রমণ আমগাছের কচি পাতা, কান্ড, মুকুল, কুঁড়ি ও ফলে প্রকাশ পায়। পাতায় অসম আকৃতির ধুসর বাদামী বা কালচে রঙের দাগ পড়ে। পাশাপাশি দাগসমুহ একত্রিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করতে পারে। বেশী আক্রান্ত পাতা ঝরে পড়ে। কচি পাতার আক্রান্ত স্থানের কোষগুলি দ্রুত মারা যায়। আমের মুকুল বা ফুল আক্রান্ত হলে কালো দাগ দেখা দেয়। আক্রান্ত ফুল মারা যায় ও ঝরে পড়ে। মুকুলে আক্রমণ হলে ফল ধারণ ব্যাহত হয়। আম ছোট অবস্থায় আক্রান্ত হলে আমের গায়ে কালো দাগ দেখা। আক্রান্ত ছোট আম ঝরে পড়ে। আম বড় হওয়ার সময় ঘন ঘন বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করলে আমে আক্রমণ বেশী দেখা যায়।

আক্রান্ত পাতা
আক্রান্ত কচি আম
আক্রান্ত পাকা আম

প্রতিকার
প্রতি বছর আম সংগ্রহের পর রোগাক্রান্ত বা মরা ডালপালা ছাঁটাই করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
গাছের রোগাক্রান্ত ঝরা পাতা ও ঝরে পড়া আম সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটি চাপা দিতে হবে।
মুকুলে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করতে হলে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক কাফা ৮০ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। মুকুল ১০-১৫ সেমি লম্বা হলেই প্রথম স্প্রে শেষ করতে হবে। আম মটর দানার মত হলে দ্বিতীয় বার স্প্রে করতে হবে। এতে কচি আমে আক্রমণ প্রতিহত করবে এবং আম ঝরে পড়া কম হবে। কীটনাশকের সাথে এসব ছত্রাকনাশক মিশিয়ে একত্রে স্প্রে করা যেতে পারে।
বাড়ন্ত আমকে রোগমুক্ত রাখতে হলে আম সংগ্রহের ১৫ দিন আগ পর্যন্ত কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক, যেমন- আরবা প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার স্প্রে করতে হবে।

বোঁটা পচা (Stem-End Rot)
রোগের লক্ষণঃ আম গাছ থেকে পাড়ার পর পাকতে শুরু করলে বোঁটা পচা রোগের লক্ষন প্রকাশ পেতে শুরু করে। প্রথমে বোঁটায় বাদামী অথবা কালো দাগ দেখা দেয়। দাগ দ্রুত বাড়তে থাকে এবং গোলাকার হয়ে বোঁটার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত আম ২/৩ দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়।

আক্রান্ত আম

প্রতিকার
মেঘমুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে গাছ থেকে আম পাড়তে হবে। আম পাড়ার সময় যাতে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫ সে.মি. (২ ইঞ্চি) বোঁটাসহ আম পাড়লে রোগের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
আম পাড়ার পর গাছের তলায় জমা না রেখে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
আম পাড়ার পর পরই গরম পানিতে ৫৫° সেঃ তাপমাত্রার পানিতে ৫ মিনিট অথবা প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম আরবা মিশিয়ে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখার পর গুদামজাত করলে বোঁটা পচা রোগের আক্রমণ হয় না।

আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক (Gummosis and Sudden Decline)

মারাত্বক আক্রান্ত বড় আমগাছ
সম্পূর্ণ মারা যাওয়া গাছ
রোগের লক্ষণঃ বর্তমানে আম গাছের যে সমস্ত রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এ রোগে আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যায়। প্রথমে কান্ড বা ধড় অথবা মোটা ডালের কিছু কিছু জায়গা থেকে হালকা বাদামি থেকে গাড় বাদামি বা কালো রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে। বেশী আক্রান্ত ডগা বা ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। এ অবস্থায় মরা ডালে পাতাগুলো ডগায় আঁটকে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে। কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একই ভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে।

কিছু ভালো অংশসহ আক্রান্ত স্থানের বাকল এভাবে তুলে ফেলতে হবে
বাকল তুলে এভাবে জিবালের পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে
প্রতিকার
আক্রান্ত গাছে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।
গাছে মরা বা ঘন ডাল পালা থাকলে তা নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে।
আক্রমণ দেখা মাত্রই আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের ছাল/বাকল কিছু সুস্থ অংশসহ তুলে ফেলে দিয়ে উক্ত স্থানে বোর্দো বা জিবাল-এর পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে।
কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক, যেমন- জিবাল প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২/৩ বার সম্পূর্ণ গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আগা মরা (Die Back)

আক্রান্ত ডগা
আক্রান্ত কম বয়সী গাছ
আক্রান্ত বয়স্ক গাছ
রোগের লক্ষণঃ রোগের জীবানু প্রথমে কচি পাতায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত পাতা বাদামী হয় এবং পাতার কিনারা মুড়িয়ে যায়। পাতাটি দ্রুত মারা যায় ও শুকিয়ে যায়। আক্রমণ পাতা থেকে কুঁড়িতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডগার অগ্রভাগ মেরে ফেলে। মরা অংশ নিচের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, ফলে বহু দূর থেকে আগা মরা রোগের লক্ষণ বোঝা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ দমন না করলে রোগ সমস্ত ডালে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশী হলে গাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকার
আক্রান্ত গাছে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।
আক্রান্ত ডাল কিছু সুস্থ অংশসহ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বোর্দো বা জিবাল-এর পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে।
কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক, যেমন- জিবাল প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২/৩ বার সম্পূর্ণ গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে ।

পাউডারী মিলডিউ (Powdery Mildew)

আক্রান্ত মুকুল
মারাত্বক আক্রান্ত আম গাছ
রোগের লক্ষণঃ পাউডারী মিলডিউ রোগের আক্রমণ প্রধানতঃ আমের মুকুল ও কচি আমে প্রকাশ পায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীর্ষ প্রান্তে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। হালকা বৃষ্টি, মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ এ রোগের জীবাণুুর ব্যাপক উৎপাদনের সহায়তা করে। অনুকূল আবহাওয়ায় এই পাউডার সম্পূর্ণ মুকুলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত মুকুলের সমস্ত ফুল নষ্ট হয়ে যায় এবং গাছে কোন ফল ধরে না।

প্রতিকার
রোগের লক্ষন দেখা দিলেই সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক, যেমন- সাহার প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৫-৭ দিনের ব্যবধানে দুই বার ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

লাল মরিচা (Red Rust)
রোগের লক্ষণঃ লাল মরিচা রোগ প্রধানতঃ পাতায় দেখা যায়, তবে কোন কোন সময় পাতার বোঁটা বা কচি কান্ডে দেখা দিতে পারে।

মারাত্বক আক্রান্ত পাতা
প্রথমে পাতায় ধূসর-সবুজ রং বিশিষ্ট দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এই দাগ সুস্পষ্ট লালচে বাদামী রং ধারণ করে। দাগগুলি প্রায় গোলাকার এবং কিছুটা উঁচু মনে হয়। কয়েকটি দাগ একত্রিত হয়ে অসম আকৃতির বড় দাগের সৃষ্টি করে। দাগের মধ্যে অবস্থিত শৈবালের দেহ কিছুটা মখমলের মত কোমল মনে হয়।

প্রতিকার
রোগাক্রান্ত ঝরা পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
বেশী আক্রান্ত ডগা ছাঁটাই করে ছাঁটাইকৃত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক, যেমন- জিবাল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ১৫ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করে গাছ রোগমুক্ত রাখা যায়।

বিকৃতি (Malformation)
রোগের লক্ষণঃ আক্রমণের স্থান অনুযায়ী বিকৃতি দুই প্রকার। যথাঃ কান্ড বা দৈহিক বিকৃতি ও মুকুলের বিকৃতি ।

দৈহিক বিকৃতি

কান্ড বা দৈহিক বিকৃতি প্রধানতঃ চারা বা ছোট গাছে দেখা যায়। আক্রান্ত কান্ডের মাথায় বা গিঁটে অসংখ্য নতুন কুঁড়ি বের হয়। কুঁড়িগুলি বেশ শক্ত ও ছোট ছোট পাতাযুক্ত হয়ে থাকে। কুঁড়িগুলি বড় হয়না বরং গিটের চতুর্দিকে আরো কুঁড়ি বের হয়ে জটলার সৃষ্টি করে। এক সময় নতুন কুঁড়িগুলি মারা যায়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত চারাগাছের বৃদ্ধি হয় না এবং এতে গাছ দূর্বল হয়ে মারা যেতে পারে। ৭/৮ বছরের বেশী বয়সের গাছে সাধারনত দৈহিক বিকৃতি দেখা যায় না।

মুকুলের বিকৃতি স্বভাবতই ফলবান গাছে পরিলক্ষিত হয়। রোগাক্রান্ত মুকুলে অসংখ্য শাখা প্রশাখা বের হয়। এসব শাখা প্রশাখা বেশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, মোটা ও তুলনামুলকভাবে শক্ত হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা জটলার মত মনে হয়। বিকৃত মুকুলে উভলিঙ্গ ফুল তেমন না থাকায় কোন ফল ধারন করে না। বিকৃত মুকুল ২/৩ মাস পর্যন্ত গাছে আটকে থাকতে দেখা যায়।

মুকুলের বিকৃতি

প্রতিকার
দৈহিকভাবে বিকৃত কুঁড়িগুলি ভেঙ্গে ফেলতে হবে অথবা আক্রান্ত স্থান কেটে ফেলতে হবে।
বিকৃত মুকুল দেখা দেওয়া মাত্রই কেটে ফেলতে হবে।
কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক, যেমন- আরবা প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ১০ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করে গাছ রোগমুক্ত রাখা যায়।
মুকুল বের হওয়ার প্রায় ৩ মাস পূর্বে (অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে) ইউরিয়া বা মোনিফা স্প্রে করলে রোগের তীব্রতা কমে যায়।

ঝুল রোগ (Sooty Mold)
রোগের লক্ষণঃ ঝুল রোগের আক্রমণে পাতার উপর কালো আবরণ পড়ে। এই কালো আবরণ হচ্ছে ছত্রাকের দেহ (Mycellium) ও বীজকণার সমষ্টি। আমের শরীরেও কালো আবরণ দেখা দেয়।

ঝুল রোগে আক্রান্ত মুকুল
ঝুল রোগে আক্রান্ত পাতা

বিস্তারঃ রোগের বীজকণা বা কণিডিয়া বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে থাকে। হপার বা শোষক পোকা আমের মুকুলের মারাত্মক শত্রু। এ পোকা মুকুল থেকে অতিরিক্ত রস শোষণ করে এবং মধু জাতীয় এক প্রকার আঠালো পদার্থ (যা হানিডিউ নামে পরিচিত) নিঃসরণ করে। উক্ত হানিডিউ মুকুল ও পাতার উপর পতিত হয় ও তার উপর ছত্রাকের বীজকণা জন্মায় এবং কালো আবরণের সৃষ্টি করে। হপার ছাড়াও ছাতরা পোকা (মিলিবাগ) ও স্কেল পোকা (Scale Insect) হানিডিউ নিঃসরণ করে এবং ঝুল রোগের আক্রমণে সহায়তা করে। হানিডিউ ছাড়া এ রোগ জন্মাতে পারে না।

প্রতিকার
হানিডিউ নিঃসরণকারী হপার, মিলিবাগ বা স্কেল পোকা বিভিন্ন কীটনাশক, যেমন- জুবাস, জাহিম, জাদীদ বা তাকাত ব্যবহারের মাধ্যমে দমনে রাখতে পারলে ঝুল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
আক্রান্ত গাছে কার্বেন্ডাজিম বা প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক, যেমন- আরবা বা সাদিদ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বা ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

দাদ (Scab)
রোগের লক্ষণঃ আম মটর দানার মত হলেই এ রোগের আক্রমণ শুরু হতে পারে। আক্রান্ত আমের শরীর বাদামী রং ধারণ করে, খোসা ফেটে যায় ও খসখসে হয়ে উঠে। আক্রান্ত আমের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে তা ঝরে পড়ে।

গাছে মারাত্বক আক্রান্ত বাড়ন্ত আম
আক্রান্ত গুটি আম
রোগের আক্রমণে বাড়ন্ত আমের শরীরে বাদামী দাগের সৃষ্টি হয়। অনুকূল আবহাওয়ায় দাগগুলো বাড়তে থাকে এবং সম্পূর্ণ আমের শরীর ঢেকে ফেলে। আক্রান্ত স্থানের চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। আমের শরীর খসখসে অমসৃন হওয়ার কারণে আমের বাজার দর কমে যায়।

প্রতিকার
রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে হামা প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম অথবা তারেদ প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে ৭-১০ দিন পর পর ৩/৪ বার স্প্রে করে গাছ রোগমুক্ত রাখা যায়।

আক্রান্ত ডগা
গোলাপী রোগ (Pink Disease)
রোগের লক্ষণঃ রোগের আক্রমণে কান্ডের বাকলে কোন কোন জায়গায় গোলাপী রংয়ের আবরণ দেখা যায়। এ আবরণ আক্রান্ত ডালের চতুর্দিকে বেষ্টন করে থাকে। এ আবরণ হচ্ছে ছত্রাক জালিকার সমষ্টি। যেহেতু উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা রোগের বৃদ্ধিতে অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে তাই বর্ষাকালে রোগের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। আক্রমণ বাকল ভেদ করে কান্ডের কাঠে প্রবেশ করে। কান্ডে আক্রমণ বেশী হলে পাতা ঝরে পড়ে এবং ডালটি মারা যেতে পারে। বেশী পাতা ঝরে পড়ার কারণে গাছ দূর্বল হয়ে পড়তে পারে।

প্রতিকার
আক্রান্ত অংশের বাকল চাকু বা ছুরি দ্বারা চেঁচে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং কাটা অংশে বোর্দো বা জিবাল-এর পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে।
ঘন ডালপালাযুক্ত গাছের কিছু ডাল ছাটাই করা উচিত যাতে গাছের ভিতর রৌদ্রকিরণ পৌঁছাতে পারে।
রোগের আক্রমণ বেশী হলে কার্বেন্ডাজিম বা প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক, যেমন- আরবা বা সাদিদ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বা ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ২/৩ বার ভালভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।