ড্রাগন ফলের চাষাবাদ পদ্ধতি

বর্তমান সময়ে একটি আলোচিত ফসল হচ্ছে ড্রাগন ফল। এটি দক্ষিন আমেরিকার জঙ্গলে জন্ম নেওয়া লতানো এক ধরনের ক্যাকটাস গাছের ফল। বর্তমানে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন ও ভারতে এই ফল প্রচুর পরিমান চাষ হলেও বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া এই ফল চাষের উপযোগী। ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। নিম্নে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হলোঃ

জাত নির্ধারণ ও চারা তৈরীঃ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার জন্য বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল) খুব ভাল। এছাড়াও হলুদ ড্রাগন ফল ও লালচে ড্রাগন ফল চাষ করা যেতে পারে। দেশের সকল হর্টিকালচার সেন্টার ও বড় ধরনের নার্সারীতে ড্রাগন ফলের চারা পাওয়া যায়। বীজ দিয়ে চারা তৈরী করা গেলেও কাটিং করে শাখা কলম করে চারা তৈরী করা উত্তম। এতে করে গাছের গুনাগুণ বজায় থাকে ও তাড়াতাড়ি ফল ধরে।

জমি তৈরী, রোপন ও পরিচর্যাঃ এই গাছ অতিরিক্ত আলো ও কম বৃষ্টি পছন্দ করে। সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে উঁচু জমি নির্বাচন করা উত্তম। কারণ এই গাছের গোড়ায় পানি জমলে গাছ মারা যায়। চারা রোপনের জন্য জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে তিন মিটার পর পর গর্ত করে গর্তে ৫-১০ কেজি হিসান, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি, ১০ গ্রাম জিপ-ফা, ১৫-২০ গ্রাম করে টোপাজবোর-ফা দিয়ে গর্ত ভরে দিতে হবে। বছরের যেকোন সময় চারা লাগানো যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে লাগানো ভাল। সিমেন্ট বা বাঁশের খুঁটির সাথে গাছ বেঁধে দিতে হবে। চারা লাগানোর পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হাদাক মিশিয়ে সমস্ত জমি স্প্রে করে দিতে হবে।

ফলন ও মূল্যঃ এপ্রিল-মে মাসে ফুল আসে, ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল হয়। অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ফুল ও ফল ধরা অব্যাহত থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হয়। ১২-১৮ মাস বয়সী একটি গাছে ৫ থেকে ২০ টি ফল পাওয়া যায়। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক ১টি গাছে ২০ থেকে ১০০টি ফল পাওয়া যায়। পাকা অবস্থায় ফল ৫ থেকে ৭ দিন সংরক্ষণ করা যায়। হেক্টর প্রতি ফলন ২০ থেকে ২৫ টন। গাছ লাগানোর ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

পুষ্টিমান ও উপকারীতাঃ ড্রাগন ফল সাধারণতঃ কাঁচা ও শরবত করে খাওয়া হয়। ড্রাগন ফলে ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় পানি ৮০-৯০ গ্রাম, শর্করা ৯-১০ গ্রাম, প্রোটিন ০.১৫-০.৫০ গ্রাম, আঁশ ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম। এছাড়াও অল্প পরিমানে চর্বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই পাওয়া যায়। এটা আমাদের স্বাস্থ্য ও চোখের উন্নয়ন করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীরের চর্বি কমায়, হাড় শক্ত ও সুস্থ দাঁত তৈরী করে, রক্তের কোলেস্টরল কমায় ও ত্বক মসৃণ রাখে, কাটা বা ভাঙা জোড়া লাগাতে সাহায্য করে।

বালাই ব্যবস্থাপনাঃ শিকড়, কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগ দেখা যায়। গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমার কারণে শিকড় পঁচে যায়। তাই গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। আর কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে আরবা অথবা হামা স্প্রে করতে হবে। এছাড়া মাঝে মাঝে মাকড় ও মিলিবাগের আক্রমণ দেখা যায়, যা প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে দামদামা বা ১ মিলি হারে তাকাত অথবা ১৬ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম লাহিব ব্যবহারে এসব পোকা ও মাকড় দমন করা যায়।