লামাহ্ ব্যবহারে অবিশ্বাস্য এক সাফল্য গাঁথা

গত আমন মৌসুমে ধানে মহামারী আকারে বাদামী গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) এর আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষকগণ যে যার মতো করে ঔষধ প্রয়োগ করে ফসল রক্ষার চেষ্টা করে। জনাব মোঃ জালাল উদ্দীন প্রামানিক, পিতা- মৃত ভরু প্রামানিক, গ্রামঃ দেবীশাউল, ডাকঘরঃ রায়কালী, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট, জ্বরে অসুস্থ হয়ে বগুড়া হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সে কারণে ধানের জমির খোঁজ রাখা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ক্ষেতে কোন ঔষধ প্রয়োগ না হওয়ার ফলে কারেন্ট পোকার আক্রমণ মারাত্বক ধারণ করে। ক্ষেতের অধিকাংশ স্থানে হপার বার্ণ (ফড়িং পোড়া) লক্ষণ সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। রাস্তার পাশে ক্ষেত হওয়ার ফলে পথচারী লোকজন শুধু হায় হায় করে বলতে থাকে এই ফসল তো আর রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বাদামী ঘাস ফড়িং এর আক্রমণ

ঐ সময় আমি ক্ষেতটি পরিদর্শন করে ভাবতে থাকি কিভাবে এই কারেন্ট পোকা দমন করে উক্ত ক্ষতির হাত থেকে কৃষককে রক্ষা করা যেতে পারে। বিষয়টি আমি ইনতেফা কোম্পানীর জনাব হাবিবুর রহমান (ডেপুটি ম্যানেজার, পিডিটিআর) কে অবহিত করি। পরদিন ঠিক দুপুরে জনাব হাবিবুর রহমান ক্ষেত পরিদর্শন করে এতো পোকা দেখে তিনিও অবাক হয়ে যান। এই ফসলের সাথে জড়িয়ে আছে জালাল মিয়ার অনেক স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন আমরা জালাল মিয়ার তেতাল্লিশ শতাংশ জমিতে ১০০ গ্রাম লামাহ্ এবং তাকাত ৫০ মিলি একত্রে মিশিয়ে ১৬ লিটারের স্প্রেয়ার দিয়ে ৫ মেশিন পানি করে সমস্ত ধান গাছ গোড়া সহ ভিজিয়ে স্প্রে করা হয়। স্প্রে করার দুই দিন ধান গাছের চেহারা অপরিবর্তিত ছিল, কিন্তু পোকার আক্রমণ অর্ধেকের বেশী কমে গেল। ঠিক চার দিনের মাথায় ১০০ মিলি তাকাত দ্বিতীয় স্প্রে করা হয়।

ক্ষেতটি আমি নিয়মিত পরিদর্শন করে জনাব হাবিবুর স্যারকে জানাতাম। তাকাত ব্যবহারের একদিন পর ক্ষেতে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, অনেক খোঁজা খুঁজি করে একটি পোকাও আর চোখে পড়ল না। সেই সঙ্গে আরো লক্ষ্য করলাম ধান গাছের অতিরিক্ত হলুদ বর্ণ দূর হয়ে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। দেখলাম কৃষক জালাল মিয়ার চোখে মুখে আনন্দের হাসি। আমার বুকটা গর্বে ভরে গেল। ভাবলাম এটাইতো চাকুরী জীবনের স্বার্থকতা।

তারপর ধান গাছের সুস্থতা ও ফলন বৃদ্ধির জন্য তারেদ ৭৫ মিলি এবং টোপাজ চিলেটেড প্লাস ৫ প্যাকেট একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দেই। ঐ দিনই তিনি এগুলো প্রয়োগ করেন। কয়েক দিনের মধ্যে ফসলের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। পরিশেষে ধান মাড়াই এর পর কথা হয় কৃষক জালাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন যে, ক্ষেতে এক দানা ধান পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, সেখানে আমি ১৪ মন ফলন পেয়েছি যা বাজারে বিক্রয় করে ফসলের খরচ বাদেও লাভবান হয়েছি। তিনি ইনতেফা কোম্পানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও আশেপাশের এলাকার লোকজনও ইনতেফার পণ্যের প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠে।