বিএলবি বা ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা ঝলসানো রোগ

পৃথিবীতে দানা ফসল প্রায় ১৬ টি হলেও বাংলাদেশে কম বেশি ৭ টি ফসল সফল ভাবে আবাদ হয়। এগুলো হলো- ধান, গম, ভুট্টা, যব, জোয়ার, চিনা ও কাউন। আমাদের দেশে খাদ্য ফসল হিসাবে ধানের পর গম ও ভুট্টার স্থান। এর মধ্যে ধান বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ফসল। শতকরা ৬০-৮০ ভাগ শর্করা, ৬-১৪ ভাগ আমিষ ও ১-৫ ভাগ স্নেহ পদার্থ আমরা দানা ফসল থেকে পেয়ে থাকি। চাষকৃত জমির প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ জমিতে ধান চাষ হয়। ধান বাংলাদেশের সব অঞ্চলে জন্মে। বাংলাদেশের ধানের মোট ৩২ টি রোগ সনাক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ১০ টি মুখ্য ও ২২ টি গৌন। এসব রোগের মধ্যে ভাইরাস জনিত ২ টি, ব্যাকটেরিয়া জনিত ৩ টি, কৃমি দ্বারা সংঘটিত ৫ টি এবং ছত্রাক জনিত রোগ ২২ টি দেখা যায়।

পাতা ঝলসানো রোগ

আজ আমরা আলোচনা করবো বিএলবি বা ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা ঝলসানো রোগ নিয়ে।

রোগের কারণঃ ব্যাকটেরিয়া।

রোগের বাহনঃ পরিত্যাক্ত খড়কুটা, পোকা, বাতাস ও সেচের পানি।

 

কৃসেক

রোগের লক্ষণঃ সাধারনত চারা ও কুশি অবস্থায় কৃসেক এবং বয়স্ক গাছে পাতায় পোড়া লক্ষণ প্রকাশ পায়। কৃসেক হলে গাছটি প্রথমে নেতিয়ে পড়ে ও আস্তে আস্তে মারা যায়। আক্রান্ত গাছের কান্ড ছিঁড়ে বা চারাটির গোড়ার দিকে চাপ দিলে পুঁজের মত খুব দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ বের হয়। কুশি বা তার পরবর্তী পর্যায়ের যে কোন সময়ে পাতা পোড়া লক্ষণ দেখা যায়। প্রাথমিক লক্ষণ পাতার অগ্রভাগে বা কিনারায় নীলাভ পানি চোষা দাগ আকারে দেখা যায়। দাগগুলো আস্তে আস্তে হালকা হলুদ হয়ে পাতার অগ্রভাগ থেকে নিচের দিকে বাড়ে। ব্যাকটেরিয়ার কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভেতরের দিকে হলদে পুতির দানার মত গুটি সৃষ্টি করে এবং শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার গায়ে লেগে থাকে। শেষের দিকে আংশিক বা সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায় এবং ধুসর বা শুকনো খড়ের মত হয়।

প্রতিকারঃ
সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার ও ইউরিয়া ৩ (তিন) কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
এই রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার পানি দিতে হবে এবং একই সাথে বিঘা প্রতি ৫-৭ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১৬ লিটার পানিতে ৪-৬ গ্রাম হারে বাহা স্প্রে করতে হবে। অথবা জিবাল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধান বের হওয়ার সময় বাহা কিংবা জিবাল দিয়ে স্প্রে করা যাবে না। ধান বের হওয়ার পূর্বে অথবা পুরোপুরি ধান বের হওয়ার পর বাহা অথবা জিবাল দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বীজ হাদাক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে হাদাক দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।