হলুদ মাজরা পোকা

বাংলাদেশে সকল মৌসুমেই ধানের হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এদের মথের রং কিছুটা হালকা হলুদ বর্ণের। স্ত্রী মথের সামনের পাখা দুটোর প্রায় মাঝামাঝি স্থানে একটি করে উজ্জল কালো বর্ণের ফোটা থাকে। পুরুষ মথ স্ত্রী মথের চেয়ে কিছুটা ছোট হয়ে থাকে।

জীবনচক্রঃ
স্ত্রী মথ ধান গাছের পত্র ফলকের উপর ২/৩ দফায় গাদা করে ডিম পাড়ে। ডিমের গাদা তামাটে লোমে আবৃত থাকে এবং ডিম ফোটার আগে কালো থাকে। প্রতি দফায় সর্বোচ্চ ১৫০ টি এবং সর্বমোট ৩০০ টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। ডিম দেওয়ার ৬-৮ দিন পর ডিম ফুটে শুককীট বের হয়। এ শুককীট গুলো ধান গাছের মাঝের কচি ডগা ছিদ্র করে কান্ডের ভিতরে প্রবেশ করে এবং কান্ডের ভিতরের নরম অংশ খেতে থাকে। কীড়াগুলোর রং হালকা হলুদ বর্ণের হয়। শুককীট অবস্থায় এরা ২৮-৫৬ দিন অতিবাহিত করে এবং ৬ বার খোলস বদলায়। অতঃপর কীড়াগুলো ৬-১২ দিন মুককীট অবস্থায় অতিবাহিত করে মথ হয়ে বেড়িয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় এরা ৭-১০ দিন বাঁচে। সাধারনত ৪০-৭৩ দিনের মধ্যে এদের জীবনকাল শেষ হয়।

সাদা শীষ
মরা ডিক

ক্ষতির প্রকৃতি ও লক্ষণঃ
শুককীট কান্ডের ভিতরের নরম অংশ খাওয়ার ফলে গাছের নিচের অংশ হতে কোন খাদ্যরস উপরে যেতে পারে না। ফলে পোকায় আক্রান্ত ডগা বা শীষ যথাক্রমে লাল্‌চে হলুদ ও সাদা রং ধারন করে শুকিয়ে মারা যায়। লক্ষণগুলোকে যথাক্রমে মরা ডিক ও সাদা শীষ বলে।

প্রতিকারঃ
জৈবিক দমনঃ আক্রান্ত ফসলের পাতায় ডিমের গাদা দেখলেই তা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। ক্ষেতে গাছের ডাল, বাঁশের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিতে হবে, যাতে বিভিন্ন পোকা খাদক পাখি বসতে পারে এবং পোকা খেতে পারে। পূর্ণবয়স্ক মথ আলোতে আকৃষ্ট হয়। তাই রাতে আলোর ফাঁদের সাহায্যে মথ ধ্বংস করতে হবে। জমির নাড়া বা শুকনো আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

রাসায়নিক দমনঃ অন্যান্য দমন ব্যবস্থা নেয়ার পরও পোকা দেখা গেলে বাতির ৯৫ এসপি প্রতি বিঘায় ৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে।