মাছ ও চিংড়ি চাষের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হচ্ছে জলাশষের pH (পিএইচ)। এটি মূলত জলাশয়ের মাটি ও পানির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব নির্দেশ করে। একটি পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা কতটুকু তা সেই জলাশয়ের pH এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায়। pH ৭ এর কম হলে মাছ ও চিংড়ির বৃদ্ধি কম হয় । একইভাবে pH ৯ এর বেশি হলে মাছ ও চিংড়ির নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়, এমনকি মাছ মারা যেতে পারে।
মাছচাষের জন্য পুকুরের পানির আদর্শ pH: ৭.৫-৮.৫
pH কম হওয়ার প্রভাব
মাছ ও চিংড়ির শরীরে ধকল পড়ে।
প্রাকৃতিক খাবার বা ফাইটোপ্লাঙ্কটন তৈরি ব্যাহত হয়।
মাছ খাওয়া ছেড়ে দেয়।
মাছের হাড়ের গঠন ব্যাহত হয় ।
চিংড়ির খোলস পরিবর্তন ব্যাহত হয় ।
মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায় ৷
মাছের শরীরের মিউকাস (পিচ্ছিল পদার্থ) নিঃসরণ বেড়ে যায়।
ফুলকা বন্ধ হয়ে মাছ মারা যেতে পারে ।
pH বেশি হওয়ার প্রভাব
অ্যামোনিয়া গ্যাস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
মাছের শরীরের মিউকাস (পিচ্ছিল পদার্থ) নিঃসরণ কমে যায়।
মাছের শরীর খসখসে হয়ে যায়।
চিংড়ির খোলস নরম হয়ে যায়।
শরীরে রোগজীবাণু সহজেই আক্রমণ করতে পারে।
মাছ ও চিংড়ির ফুলকা, চোখ ও ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
pH কম বা বেশি হওয়ার সমাধান
প্রতি ৩৩ শতাংশে ৩-৫ ফিট গভীরতার জন্য
জারফাঃ ৪-৬ কেজি অথবা,
জামিঃ ২-২.৫ কেজি
জারফা বা জামি‘তে উপস্থিত জিওলাইটের অভ্যন্তরে স্পঞ্জ বা ফোমের মত ফাঁকা জায়গা থাকে। সেই ফাঁকা জায়গায় জলাশয়ের বিভিন্ন ক্যাটায়ন বা আয়নসহ মাটি ও পানির ক্ষতিকর গ্যাস আটকা পড়ে। এ প্রক্রিয়াকে ক্যাটায়ন এক্সচেঞ্জ বলা হয়। জারফা এবং জামি অনেক বেশি ক্যাটায়ন এক্সচেঞ্জ ক্যাপাসিটি (CEC ≥১৯৬.১২ meq/১০০g) সমৃদ্ধ । এভাবে জারফা এবং জামি খুব সহজেই মাটি ও পানির সঠিক pH বজায় রাখতে সক্ষম।
পাশাপাশি জারফা বা জামি বাফারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুকুরের pH এর ভারসাম্য বজায় রাখে। অর্থাৎ, pH কমে গেলে জারফা বা জামি যেমন pH বাড়িয়ে ৭.৫-৮.৫ (আদর্শ pH) করে, তেমনি pH বেড়ে গেলে তা কমিয়ে pH এর আদর্শ মান ৭.৫-৮.৫ এ নিয়ে আসে। জারফা ও জামি‘তে উপস্থিত SiO2, A2O3, Na2O, CaO, MgO, Fe2O3, K2O, Mn ইত্যাদি পুকুরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের যোগান নিশ্চিত করে । জারফা এবং জামি জলাশয়ের পাশাপশি ফসলের জমির উর্বরতা বাড়াতে এবং আদর্শ pH ধরে রাখতে ফসলের জমিতেও ব্যবহার করা যায়।