মৎস্যচাষে ধকলের প্রভাব ও সমাধান

ধকল বলতে এমন এক ধরণের পারিপার্শ্বিক বা পরিবেশগত অবস্থাকে বুঝায় যেখানে মাছ ও চিংড়ি তাদের জীবন ধারণের স্বাভাবিক কর্মকান্ড বা শারীরবৃত্তীয় কাজ (খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য হজম প্রক্রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, শ্বসন ইত্যাদি) পরিচালনা করতে পারে না। ধকলের ফলে মাছ ও চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এটি মাছচাষের অন্যতম প্রধান একটি প্রতিবন্ধকতা।

মৎস্যচাষে ধকলের কারণসমূহ
জলাশয়ের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত নানাবিধ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলাফল হিসেবে মাছ ও চিংড়িতে ধকল পড়ে। তন্মধ্যে নিম্নলিখিত কারণগুলো উল্লেখযোগ্য-
মৎস্যচাষে ধকলের প্রভাব
১। অধিক ঘনত্বে মাছচাষ
২। অতিরিক্ত তাপমাত্রা
৩। অ্যামোনিয়াসহ ক্ষতিকর গ্যাসসমূহ
৪। দ্রবীভূত অক্সিজেনের অভাব
৫। মাছ ও চিংড়ি পরিবহন
৬। অনিয়ন্ত্রিত পিএইচ (pH)
৭। পুকুরে জাল টানা
৮। রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ
৯। রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা
১০। অগভীর জলাশয়
১১। সুষম খাদ্যের অভাব
১২। অনিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ ইত্যাদি।

মাছ ও চিংড়িতে ধকলের ফলাফল

মাছ ও চিংড়িতে ধকলের ফলে মাছ ও চিংড়ি দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়। ফলে মাছ ও চিংড়িতে সুষম পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। একদিকে শারীরিক দুর্বলতা ও অপরদিকে পুষ্টির অভাবে মাছ ও চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপকহারে হ্রাস পায়। ফলে মাছ ও চিংড়ি সহজেই নানা ধরণের রোগ-ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হতে থাকে। এর ফলাফলস্বরূপ মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন খরচ যেমন বাড়তে থাকে, পাশাপাশি মোট উৎপাদন হ্রাস পায়।

নাবিত ভিটামিন এ এবং গ্লুকোজ এনহাইড্রাস সমৃদ্ধ একটি আদর্শ ইলেক্ট্রোলাইট যা মাছ, চিংড়ি, মুরগী ও গবাদিপশুর পরিবহন ও পরিবেশগত নানাবিধ ধকল কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে।
প্রতি কেজি নাবিত-এ আছে সোডিয়াম বাই কার্বনেট- ৫০০ গ্রাম, সোডিয়াম ক্লোরাইড- ২৬৬ গ্রাম, পটাশিয়াম ক্লোরাইড- ৫০ গ্রাম, গ্লুকোজ এনহাইড্রাস- ১৮০ গ্রাম এবং ভিটামিন এ- ৫,০০,০০০ আই.ইউ.।

নাবিত ব্যবহারের উপকারিতা

নাবিত-এ সোডিয়াম বাই কার্বনেট থাকায় নাবিত মাছ ও চিংড়ির শরীরের বাই কার্বনেটের অভাব পূরণ করে পানিশূন্যতা (Dehydration) দূর করে। এছাড়াও রক্তের পিএইচ (pH) বাড়িয়ে অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
নাবিত-এ উপস্থিত সোডিয়াম ক্লোরাইড মাছ ও চিংড়ির শরীরের তরল অংশ (Body Fluids) ও খনিজ পদার্থের (Electrolytes) ভারসাম্য রক্ষা করে।
ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব পূরণ করে মাছ ও চিংড়িকে সতেজ রাখে।
নাবিত শরীরের বিভিন্ন তরল (রক্ত, মূত্র, এনজাইম ইত্যাদি) অংশের চাপ (Osmotic Pressure) নিয়ন্ত্রণ করে।
নাবিত-এ গ্লুকোজ এনহাইড্রাস বিদ্যমান থাকায় মাছ ও চিংড়ির রেণু ও পোনাকে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে।
রোগজনিত কারণে সৃষ্ট দুর্বলতা দূর করে।
পোনার মৃত্যুহার কমায়।

প্রয়োগমাত্রা ও ব্যবহারবিধি

প্রয়োগক্ষেত্র প্রয়োগমাত্রা প্রয়োগকাল
মাছ ও চিংড়ি ১-২ গ্রাম/লিটার পানি রেণু/পোনা পরিবহনের ক্ষেত্রে
৩-৫ গ্রাম/লিটার পানি বড় মাছ পরিবহনের ক্ষেত্রে
১ কেজি/৩৩ শতাংশ/৩-৫ ফুট পানি পোনা মজুদের ক্ষেত্রে
পোল্ট্রি ও গবাদিপ্রাণী ১ গ্রাম/লিটার পানি ৩-৫ দিন
৫ গ্রাম/কেজি খাবার ৩-৫ দিন