আজনা- প্রতি বছর ধরবে আম, কৃষক হবে লাভবান

বাংলাদেশ মৌসুমী ফলের দেশ। এখানে নানা স্বাদের ও বর্ণের বিভিন্ন প্রকারের ফল জন্মে। আম বাংলাদেশের একটি অতি জনপ্রিয় ও সুস্বাদু ফল। বর্ণ ও গন্ধে এই ফল অতুলনীয়। আমের যেমন অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে, তেমনি এর সামাজিক তাৎপর্য সুবেদিত। স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান বিবেচনায় আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। এ কারনে আমাদের দেশে আমকে বলা হয় ফলের রাজা। বাংলাদেশ সরকার আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষনার মাধ্যমে আমের গুরুত্বকেই বস্তুতপক্ষে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। আম পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ। পাকা ফলে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যারোটিন রয়েছে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমানে ভিটামিন বি, সি ও খনিজ উপাদান আছে। কাঁচা আমে পাকা আমের তুলনায় দেড়গুন ভিটামিন সি বিদ্যমান। এছাড়াও আমের আছে নানা ঔষধি গুণ ও বহুবিধ ব্যবহার।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয় (সূত্রঃ বিবিএস রিপোর্ট, ২০১৯)। উন্নত জাতের আবাদ, উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও পরিচর্যার মাধ্যমে আমের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমান বৃদ্ধি করার সুযোগ আছে। আয়-ব্যয় হিসাবে অন্যান্য মাঠ ফসলের তুলনায় আমের আবাদ অত্যন্ত লাভজনক। বর্তমানে বিদেশে আম রপ্তানির সম্ভবনা উজ্জ্বল হওয়ায় বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের মাধ্যম হিসাবে আম আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আমাদের দেশে আমের ফলন বেশ কম, হেক্টর প্রতি ফলন ৪ মেট্রিক টন। কিন্তু ভারতে আমের ফলন হেক্টর প্রতি ১০ মেট্রিক টন। ফলন কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো উন্নত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, রোগবালাই দমন ও গাছের সঠিক পরিচর্যার অভাব। দিন দিন রপ্তানির সুযোগ বাড়ছে। ভালো জাত রোপন, রোগবালাই দমন ও গাছের সঠিক পরিচর্যা করলে আম উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

আম গাছের সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিচর্যা গাছের সর্বোচ্চ ফলন এনে দিতে পারে। অনেক আম গাছে প্রতি বছর মুকুল আসে না। এক বছর পরপর মুকুল আসে। অর্থাৎ অনেক গাছে একবছর মুকুল আসে এবং পরবর্তী বছর মুকুল আসে না বা মুকুল অনেক কম আসে। প্রতি বছর আম না আসা চাষীদের জন্য একটি প্রধান সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ইনতেফা কোম্পানী প্রথম বারের মত বাজারে এনেছে আজনা। যাতে রয়েছে প্যাক্লোবিউট্রাজল ২৫%।

যে গাছটিতে গত ৭-৮ বছরে কখনও মুকুল আসেনি সে গাছে আজনা ব্যবহারে মুকুল এল

আম চাষী, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা স্বচক্ষে বাগান ঘুরে দেখেন। বিশেষ করে যে গাছটিতে গত ৭-৮ বছরে কখনও মুকুল আসেনি সে গাছে মুকুলের পরিমান দেখে তারা অবাক হন।

 

আজনা’র কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ইনতেফা কোম্পানীর প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ট্রায়াল এন্ড রেজিস্ট্রেশন (পিডিটিআর) বিভাগ ২৯ অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখে পণ্যটির ট্রায়াল কার্যক্রম পরিচালনা করে। ট্রায়ালটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বাগবাড়ি এলাকার জনাব মোঃ বাইরুল ইসলাম-এর আম বাগানে করা হয়। কৃষিবিদ জনাব মোঃ হাবিবুর রহমানের পরামর্শে ট্রায়ালটি পরিচালনা করেন কৃষিবিদ জনাব মোঃ সাইফুল আলম, এক্সিকিউটিভ (পিডিটিআর) এবং তাকে সহযোগিতা করেন কৃষিবিদ জনাব হানিফ উদ্দিন, এক্সিকিউটিভ ট্রেইনার (পিডিটিআর)।

ট্রায়ালের জন্য প্রথমে গাছ নির্বাচন করা হয়। যে সকল গাছে এই বছর আম ধরেছে কিন্তু আগামী বছর কম মুকুল আসবে বা না আসার সম্ভবনা বেশী সে সব গাছ ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে একটি গাছ আছে যে গাছে গত ৭-৮ বছরে কখনও মুকুল আসেনি। বাগানের মালিক জনাব মোঃ বাইরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার সকলেই জানে যে, এই গাছে মুকুল আসে না। সুতরাং এই গাছে মুকুল আসলে এলাকার সকলে আজনা’র কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবে। যে গাছ গুলোতে ট্রায়াল করা হয় সেগুলোতে গাছের বয়স নির্ধারন করে নিম্নলিখিত সার প্রয়োগ করা হয়-

গাছের বয়সঃ ২০ বছর
ব্যবহৃত সারঃ ইউরিয়া- ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি- ৪০০ গ্রাম, এমওপি- ২০০ গ্রাম, জৈব সার– ১০ কেজি, জিপ-ফা– ২০০ গ্রাম, টোপাজ– ১৫ গ্রাম ও বোর-ফা– ২০ গ্রাম।

এরপর গাছের গোড়া থেকে ৪-৫ ফুট দুরে গাছের চারিদিকে ৪-৬ ইঞ্চি চওড়া করে নালা তৈরী করা হয়। এরপর ঠিক দুপুর ১২ টায় গাছের ক্যানোপি মাপা হয়। ক্যানোপি মাপার জন্য দুপুর ১২ টায় গাছের ছায়ার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয়। ক্যানোপি পরিমাপ করার পর প্রতি মিটার ক্যানোপির জন্য ৪-৬ মিলি আজনা ৮-১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে উক্ত নালাতে সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়। আজনা প্রয়োগের ৫ দিন পর সেচ দেয়া হয়।

আজনা প্রয়োগকৃত আম বাগানে মাঠ দিবসের আয়োজন
আম বাগানে মাঠ দিবসের আয়োজন

ট্রায়াল শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময় খোঁজ-খবর ও বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। জনাব মোঃ আব্দুল বারিক, রিজিওনাল ম্যানেজার (রাজশাহী রিজিওন) ও জনাব মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম, মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ এরিয়া) ৪-৫ বার সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন করেন।

এরপর গাছ গুলোতে মুকুল আসলে সেখানে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে আজনা প্রয়োগকৃত আম বাগানে মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। মাঠ দিবসে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৬০ জন আম চাষী, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ইনতেফা কোম্পানীর প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ট্রায়াল এন্ড রেজিস্ট্রেশন (পিডিটিআর) বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার কৃষিবিদ জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান এবং এক্সিকিউটিভ কৃষিবিদ জনাব মোঃ সাইফুল আলম, রিজিওনাল ম্যানেজার জনাব মোঃ আব্দুল বারিক এবং মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ জনাব মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম।

আম চাষী, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা আজনা’র কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে মতামত প্রদান করেন
আম চাষী, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা স্বচক্ষে বাগান ঘুরে দেখেন। বিশেষ করে যে গাছটিতে গত ৭-৮ বছরে কখনও মুকুল আসেনি সে গাছে মুকুলের পরিমান দেখে তারা অবাক হন। তারা সকলে আজনা’র কার্যকারিতার কথা অকপটে স্বীকার করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে যেসব আম চাষী, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে আজনা ব্যবহার করেছেন তারা আজনা’র কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে মতামত প্রদান করেন এবং তারা বলেন যে, আজনা’ই বাজারের সেরা।