মাছ চাষী ভাইদের জন্য নতুন পণ্যের উদ্বোধন

আসন্ন মাছ চাষের মৌসুমে পরিবেশক, খুচরা বিক্রেতা এবং চাষী ভাইদের চাহিদা বিবেচনা করে ইনতেফা কোম্পানী মাছ ও চিংড়ির সুরক্ষায় নতুন ৩টি পণ্য বাজারে এনেছে- মিরাস, হারীযতারা

মিরাস একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী তরল জীবাণুনাশক যার মূল উপাদান বেনজালকোনিয়াম ক্লোরাইড (BKC) ৮০%। মৎস্য চাষে একটি গুরুতর সমস্যা হল বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ, যাতে মাছ ও চিংড়ির মৃত্যুহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় ও উৎপাদন কমে গিয়ে মৎস্যচাষী ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ সকল রোগের প্রধান কারণ পুকুর ও ঘেরে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও পরজীবীর সংক্রমণ।

মিরাস জলাশয়ের মাটি ও পানির ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া ও পরজীবীর সংক্রমণ মুক্ত করে এবং শ্যাওলার স্পোর ধ্বংস করে জলাশয়ের অতিরিক্ত শ্যাওলা দূর করে। মিরাস মাছ ও চিংড়ির ক্ষত রোগ, লেজ ও পাখনা পঁচা রোগ, লাল ফোঁটা, ড্রপসি বা পেট ফোলা, এন্টেনা রট বা শুঁড় খসা, ফুলকা পঁচা, সাদা দাগ রোগ (White Spot Disease), মস্তক হলুদ রোগ (Yellow Head Disease), কালো ফুলকা রোগ (Black Gill Disease) ইত্যাদি ও বাহ্যিক রোগ সংক্রমণ সফলভাবে প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে। মিরাস মাছ ও চিংড়ির শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চিংড়ির খোলস পরিবর্তন ত্বরান্বিত করে। এছাড়াও হ্যাচারীতে রেণু পোনার উৎপাদনে ও মাছ চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্তকরণে মিরাস অধিক কার্যকরী।

মাছ ও চিংড়ির সুরক্ষায় জলাশয়ে ৩-৫ ফুট পানির গভীরতায় প্রতি ৩৩ শতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ২০০ মিলি মিরাস মাসে ১ বার এবং জীবাণুর আক্রমণ হলে ২৫০ মিলি মিরাস ১৫ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। হ্যাচারীতে ১-২ মিলি মিরাস প্রতি টন (১০০০ লি) পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্তকরণে ১ মিলি মিরাস ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মিরাস প্রয়োগের দিন মাছকে কোন খাবার দেয়া যাবে না।

হারীয জাপান থেকে আমদানীকৃত একটি সক্রিয় ও বিশুদ্ধ প্রোবায়োটিক, যাতে রয়েছে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে বাছাইকৃত বিশুদ্ধ উপকারী ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জলাশয়ে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে মাছ ও চিংড়িকে রাখে সুরক্ষিত। হারীয-এ রয়েছে Bacillus amyloliquefaciens (ব্যাসিলাস অ্যামাইলোলিকুইফেসিয়েন্স), Bacillus pumilus (ব্যাসিলাস পিউমিলাস), Bacillus licheniformis (ব্যাসিলাস লাইকেনিফরমিস), ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) ও স্টার্চ (Starch) বা শর্করা।

ব্যাসিলাস পিউমিলাস একটি অ্যারোবিক ব্যাকটেরিয়া, যা বিভিন্ন জৈব পদার্থকে বায়বীয় পদ্ধতিতে ভেঙ্গে ফেলে পুকুর ও ঘেরের মাটি ও পানির দূষণ রোধ করে। ব্যাসিলাস লাইকেনিফরমিস একটি ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া, যা নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভেঙ্গে ফেলা জৈব পদার্থের নাইট্রোজেনকে বায়ুমন্ডলে মুক্ত করে। এতে পুকুরের ক্ষতিকর গ্যাসের উৎপাদন রোধ হয়। এছাড়াও জলাশয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি হয় এবং মাছ ও চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ব্যাসিলাস অ্যামাইলোলিকুইফেসিয়েন্স জলাশয়ের বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করে এবং সংক্রমণের হার হ্রাস করে। উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির ফলে পুকুরে ফাইটোপ্লাঙ্কটনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং মাছ ও চিংড়ির খাবার রুচি বাড়ে। ক্যালসিয়াম কার্বনেট মাছ ও চিংড়ির শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে মাছ ও চিংড়িকে সুগঠিত করে। একই সাথে পানির pH নিয়ন্ত্রণ করে এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। স্টার্চ বা শর্করা মাছ ও চিংড়ির সুষম খাদ্যের একটি উপাদান, যা মাছ ও চিংড়ির দৈহিক গঠন বৃদ্ধি করে উৎপাদন বৃদ্ধি করে।

জলাশয়ে ৩-৫ ফুট পানির গভীরতায় প্রতি ৩৩ শতকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ৩০ গ্রাম হারীয মাসে ১ বার এবং আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে ৬০ গ্রাম হারীয ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে। হারীয ব্যবহারের পূর্বের ২ দিন এবং পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত কোন জীবাণুনাশক প্রয়োগ করা যাবে না।

তারা মাছ ও চিংড়ির জলাশয়ের ক্ষতিকর গ্যাস দূর করার জন্য ১০০% ইউকা সিডিজেরা সমৃদ্ধ একটি অত্যন্ত কার্যকরী ভেষজ সমাধান। ইউকা সিডিজেরা একটি প্রাকৃতিক ডি-নাইট্রিফাইং এজেন্ট যা ক্ষতিকর গ্যাস ও জৈব বর্জ্য ভেঙ্গে নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেন ত্যাগ করে।

জলাশয়ে প্রয়োগের পর তারা অতিদ্রুত পুকুর ও ঘেরের তলদেশের অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, নাইট্রাইট, নাইট্রেট এবং অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস দূর করে এবং পানির pH নিয়ন্ত্রণ রাখে। এছাড়াও তারা জলাশয়ের তলদেশের জৈব বর্জ্য শোধন করে পরিবেশ মৎস্য চাষের উপযোগী রাখে। তারা ব্যবহার করলে মাটি ও পানির পঁচা দূর্গন্ধ দূর হয় এবং পুকুর ও ঘেরের তলদেশে কালো মাটি গঠন রোধ হয়। তারা ব্যবহারে মাছ ও চিংড়ির হজম শক্তি বাড়ে, এতে মাছ ও চিংড়ির খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত তারা ব্যবহার করলে মাছ ও চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগ সংক্রমণের হার হ্রাস পায়।

জলাশয়ে ৩-৫ ফুট পানির গভীরতায় প্রতি ৩৩ শতকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ৫০ মিলি তারা এবং আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে ১০০ মিলি তারা ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের পানিতে ক্ষতিকর গ্যাস বা দূর্গন্ধ হলে ও মাছের ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে তারা ব্যবহার করতে হবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পরিমাণমত তারা মাছের খাবারের সাথে বা পানির সাথে মিশ্রিত করে প্রয়োগ করা যায়। তারা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে জারফা-র সাথে মিশ্রিত করে ব্যবহার করলে অধিক কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যাবে।