LSD বা ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা ভেক্টর মশা-মাছির কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
বাংলাদেশে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রথম দেখা দেয় ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে। তখন দেশের ১২ জেলায় ৪৮ হাজার গরুর মধ্যে এ রোগের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এ বছর আবার এ রোগটি দেশের অধিকাংশ জেলায় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আফ্রিকা মহাদেশে ৪০ শতাংশ গরু এ রোগে মারা গেছে বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।
রোগের লক্ষণঃ
* আক্রান্ত প্রাণীর জ্বর ১০৪-১০৬ °F পর্যন্ত হয়।
* খাদ্য গ্রহণে অরুচি দেখা দেয়;
* শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুটি বা ফোস্কা দেখা দেয়।
* শরীরের নিম্নাংশ এবং পা ফুলে পানি জমে:
* হাঁটা-চলা, শোয়া-বসতে খুব সমস্যা হয়;
* শেষ পর্যায়ে কয়েকটি গুটি বা ফোস্কা ফেটে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
* পাকস্থলী এবং মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরুর পানি পানে অনীহা তৈরি হয়।
চিকিৎসাঃ
১) গরুর LSD রোগে প্রথম সপ্তাহে বেশি ঔষধ ব্যবহার করবেন না, এ সময় গরুর নিজের রোগ দমন সক্ষমতা দিয়ে রোগকে মোকাবেলায় সুযোগ দিতে হবে। কতটুকু মোকাবেলা করতে পারছে, এটা খেয়াল করে সাপোর্ট চিকিৎসা দিতে হবে।
২) এই সময়/প্রথম দুই সপ্তাহ কোন প্রকার এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না, কারন এটা ভাইরাস ঘটিত রোগ, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ না।
৩) প্রথম সপ্তাহে যত বেশি ঔষধ খাওয়াবেন, এই রোগ ভালো হতে তত বেশি সময় লাগবে; ক্ষতি বেশি হবে, শেষে চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে, তথাপি গরুর-বাছুর বাঁচানো কঠিন হবে।
৪) এ সময় আপনার প্রধান কাজ হল একটি থার্মোমিটার হাতের কাছে রাখা, জ্বর মাপা ও জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়ানো প্রতি ৮ ঘন্টা পরপর দিনে ৩ বার। কম করে হলে দিনে ২-৩ বার গোসল করাবেন, শরীর মুছে দিতে হবে, জ্বর ১০৪ °F থেকে নিচে রাখতে হবে।
৫) এই সময় খাবার সোডা বড় গরুর জন্য ৩০ গ্রাম, বাছুর হলে ১৫ গ্রাম, নিমপাতা পরিমাণ মত, জিংক সিরাপ বাছুরকে ৫০ মিলি, বড় গরুকে ১০০ মিলি করে ১৫-২০ দিন খাওয়াতে থাকুন। এতে এ রোগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হবে।
৬) গোটা গুলো মোটামুটি দৃশ্যমান হতে সুযোগ দিতে হবে, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এ সময় গরুর রোগ প্রতিরোধশক্তি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এটা জোর করে বন্ধ করতে না যেয়ে একটু সময় দিন ও পরে নন স্টেয়রয়েড এন্টিহিস্টামিন ইনজেকশন দিতে পারেন। এসময় এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ইনজেকশন ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ৮-১০ সিসি পরপর ৩ দিন/ ১ দিন পরপর তিন বার দিতে পারেন। এ সময় রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিবেন।
৭) এ সময় খাবার স্বাভাবিক রাখুন। ইলেকট্রোলাইটস/ডেক্সড্রোজ ও মিনারেলস সাপোর্ট দিতে পারেন। ওরস্যালাইন, লেবুর রস, ক্যালসিয়াম, অ্যামাইনো এসিড জাতীয় সিরাপ এসব দিয়ে এনার্জি ও পুষ্টি সাপোর্ট দিতে হবে। এতে গরুর রোগ প্রতিরক্ষা তৈরিতে সহায়তা হবে।
৮) এ সময় এন্টিভাইরাল জাতীয় পাউডার খাওয়াতে পারেন। এতে ভাইরাস ভেতর থেকে দূর্বল হয়ে যাবে।
৯) নিমপাতা সিদ্ধ পানি, পটাশের পানি, স্যাম্পু জীবাণুনাশক দিয়ে গোসল করাতে হবে।
মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণঃ যেহেতু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটি মশামাছি দ্বারা ছড়ায় তাই মশা-মাছি দমন করাও খুব জরুরি। এক্ষেত্রে ইনতেফা কোম্পানির তাহা ৩ ইসি অথবা তাসলা ১০ ডব্লিউপি ব্যবহার করলে মশা-মাছি কার্যকরীভাবে দমন হবে।

মাত্রা ও প্রয়োগবিধিঃ
তাহা ৩ ইসি: প্রতি লিটার পানিতে ৯.২ মিলি তাহা ৩ ইসি ২৫ বর্গমিটার জায়গায় স্প্রে করতে হবে অথবা সরাসরি গরুর শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রায় ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত গরুর শরীরে মশা, মাছি বসবে না।
তাসলা ১০ ডব্লিউপি: প্রতি লিটার পানিতে ৭.৮ গ্রাম তাসলা মিশিয়ে ২৭০ বর্গফুট এলাকায় স্প্রে করতে হবে।
উল্লেখিত পরামর্শ গরু পালনকারী ভাই ও বোনেরা সঠিকভাবে পালন করলে ভয়ানক LSD রোগ থেকে আপনার গরু দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে, ইনতেফা কোম্পানীকে অ্যানিমেল হেলথ্ সেক্টরে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করি দেশের সার্বিক প্রাণীসম্পদ খাতের উন্নয়নে ইনতেফা অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।

প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা
ধামরাই উপজেলা,ঢাকা