মৎস্য চাষে মীফাঃ একের ভিতর ছয় সমাধান

আধুনিক পদ্ধতিতে গুণগত মানসম্মত মৎস্য উৎপাদনে মীফা একটি অনন্য ও কার্যকর পণ্য। মীফা’তে রয়েছে শতভাগ প্রাকৃতিক স্পিরুলিনা, যা মূলত একটি নীল-সবুজ শৈবাল। এটি পুষ্টি উপাদানের দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ, ফলে এটি মাছের খাদ্যে উচ্চমানের ফিড এডিটিভ হিসেবে কাজ করে। পুকুরে প্রাকৃতিক প্লাঙ্কটন উৎপাদনের ক্ষেত্রে মীফা সফলভাবে ব্যবহার করা যায়। এটি মাছের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধুমাত্র মীফা ব্যবহারে জলাশয়ে ছয়টি সমস্যার সমাধান খুব সহজেই করা সম্ভব।

                                                     

 

১। উচ্চ প্রোটিনের উৎস

মাছের জন্য প্রোটিনের একটি কার্যকর উৎস মীফা। কারণ এর মধ্যে রয়েছে ৬০-৬২% প্রোটিন যা সহজেই হজমযোগ্য ।

  • প্রোটিন সরবরাহঃ মীফা এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে প্রয়োজনীয় ১৮টি অ্যামিনো অ্যাসিড (প্রোটিন)। যেমন- arginine, asparagine, aspartic acid, cysteine, glutamine, glycine, histidine, isoleucine, leucine, lysine, methionine, phenylalanine, proline, serine, threonine, tryptophan, tyrosine,এবং valine| উক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড গুলো মাছের পরিপাকতন্ত্র দ্বারা দ্রুত শোষিত হয়। বিশেষত lysine, methionine, এবং arginine, যা মাছের বৃদ্ধি, পেশি গঠনে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেজন্য মীফা ব্যবহারে মাছের খাদ্য রূপান্তর হার (FCR) উন্নত হয় এবং খাদ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে।

 

২। ভিটামিন মিনারেলের সম্ভার

মীফা এর মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে যা মাছের সুষম পুষ্টির জন্য খুবই উপকারী।

  • ভিটামিন সরবরাহঃ মীফা’তে রয়েছে উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন প্রয়োজনীয় ১০টি ভিটামিন। যেমন- (B1), (B2), (B3),(B6), (B12), A, C, E, D, এবং K রয়েছে। ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স শক্তি উৎপাদন, মেটাবলিজম উন্নতিতে এবং নতুন কোষ তৈরিতে সহায়তা করে।
  • মিনারেল সরবরাহঃ মীফা’য় রয়েছে প্রয়োজনীয় ৮টি মিনারেল। যেমন- জিঙ্ক, আয়রন, পটাসিয়াম, সোডিয়াম,ফসফরাস, নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। যা রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে এবং কোষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৩। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

মীফা এর মধ্যে বিদ্যমান স্পিরুলিনা (ফাইকোসায়ানিন) মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। ফাইকোসায়ানিন (১৪-২০%) মাছের অ্যান্টিবডি এবং রোগ প্রতিরোধকারী এনজাইম উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে। ফাইকোসায়ানিন মাছের ইমিউন সেল, যেমন ম্যাক্রোফেজ এবং লিম্ফোসাইট সক্রিয় করে। বিশেষ করে মীফা দ্বারা সক্রিয়কৃত এনজাইম লাইকোজাইম (Lysozyme) ব্যাকটেরিয়ার সেলওয়াল ধ্বংস করে এবং ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। তাছাড়া, ক্যাটালেজ (Catalase) ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে কোষকে রক্ষা করে।

 

৪। মাছের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি

মীফা’র মধ্যে থাকা ফাইকোসায়ানিন মাছের শরীরের ক্রোমাটোফোর (রঙ উৎপাদনকারী কোষ) এর কার্যক্রমকে সক্রিয় করে। এটি মাছের প্রাকৃতিক রঙিন পিগমেন্ট, যেমন কারোটিনয়েড এবং মেলানিনকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। ফাইকোসায়ানিন ও ক্যারোটিনয়েড, এটি বিশেষত কার্পজাতীয় মাছ ও ক্যাট ফিশের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

 

৫। পুকুরে প্রাকৃতিক প্লাঙ্কটন উৎপাদনের উৎস

মীফা পুকুর বা জলাশয়ে প্রাকৃতিক প্লাঙ্কটন তৈরিতে সফলভাবে কার্যকর। কারণ এটি একটি উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন শৈবাল যা প্রাথমিক উৎপাদক (primary producer) হিসেবে কাজ করে। এটি জলজ পরিবেশে খাদ্য শৃঙ্খল উন্নত করে। এটি অন্যান্য ক্ষুদ্র শৈবাল এবং প্লাঙ্কটন বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি জুপ্লাঙ্কটন এবং মাছের পোনা (larvae) এর প্রধান খাদ্য। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান যেমন নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস জলাশয়ের প্রাকৃতিক প্লাঙ্কটনের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। মীফা মিশ্রিত ফিড বা সরাসরি প্রয়োগ করলে ফাইটোপ্লাঙ্কটনের সংখ্যা বাড়ে, যা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে। এটি পানির গুণগতমান উন্নত করে এবং খাদ্য শৃঙ্খলের ভারসাম্য বজায় রাখে।

 

৬। নিরাপদ টেকসই মাছ উৎপাদন

মীফা জলাশয়ের জন্য অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব এবং টক্সিনমুক্ত। মীফা মিশ্রিত ফিড তলদেশের অবশিষ্টাংশ ফিডের মাত্রা কমায়। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি হ্রাস করে। এটি জলজ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি মৎস্যচাষে টেকসই একটি নিরাপদ খাদ্য চক্র তৈরি করে। মাছের খাদ্য সরবরাহে অ্যান্টিবায়োটিক বা কৃত্রিম প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে এটি বেশ উপযোগী।

 

মীফা এর ব্যবহারবিধিঃ

· খাদ্যে প্রয়োগ মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য, মীফা প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫-১০ গ্রাম করে   দিতে হবে। এছাড়াও মীফার সাথে জাহি/মাশা ৫-৭ গ্রাম এবং সাজি ৩-৫ গ্রাম একত্রে ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

 

·     জলাশয়ে প্রয়োগ প্রাকৃতিক প্লাঙ্কটন তৈরির জন্য, প্রতি ৩৩ শতাংশে ৩-৫ ফুট পানির গভীরতার জন্য মীফা ১০০- ২০০ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে। মীফা এর সাথে চিটাগুড় ২ কেজি, তাজ/ খৈল ২-৪ কেজি, হারীয ৫০-১০০ গ্রাম এবং ইষ্ট ৫০- ১০০ গ্রাম একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মিশ্রণটি ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে জলাশয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

 

 

 

                                                                                 

কৃষিবিদ মোঃ সাইফুর রহমান                                                                 কৃষিবিদ মোঃ আহসানুজ্জামান নূর

এক্সিকিউটিভ, পিডিআরএ                                                                      অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস

 অ্যানিমেল হেল্থ এন্ড অ্যাকুয়াকালচার                                           অ্যানিমেল হেল্থ এন্ড অ্যাকুয়াকালচার