বর্ষার শুরুতেই গড়ে তুলুন শখের পুষ্টি বাগান

বাগান করার আগে সঠিক পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। ইচ্ছে থাকলে কাজটি খুব সহজ। তবে সামান্য ভুলে বৃথা যেতে পারে পরিশ্রম, মাটি হতে পারে বাগান করার শখ।
প্রকৃতিতে বর্ষাকাল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। বলা হয়ে থাকে জুন, জুলাই ও আগস্টে রোপণ করা শতভাগ গাছ বাঁচানো সম্ভব। দেশে প্রায় দুই কোটি বসতবাড়ি আছে। প্রায় সবারই বাড়ির চারপাশে কিছু পরিমাণ জায়গা সারা বছরই পতিত থাকে। যা সবজি চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কালিকাপুর মডেলে সবজি চাষের মাধ্যমে বসতবাড়ির পতিত জায়গাগুলোকে উৎপাদনমুখী করে একটি পরিবার সারা বছরের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ও করতে পারেন। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুর নামক এলাকায় ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা এ মডেল উদ্ভাবন করেন।
বসতবাড়ির যে জায়গায় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ লাগে, এমন জায়গা নিবিড় সবজি আবাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। আঙিনায় আলো আসার পথে বাধা দেওয়া বাড়ির আশপাশের বড় গাছের ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। ভবিষ্যতে বড় হয়ে ছায়া সৃষ্টি করতে পারে এমন গাছও জন্মাতে দেওয়া যাবে না। বসতবাড়ির আঙিনায় ৫ মিটার × ৬ মিটার (১৬ ফুট × ১৯ – ২০ ফুট) মাপের বাগান তৈরি করতে হবে। বাগানের জন্য খোলা উঁচু স্থান বেছে নিতে হবে। প্রত্যেক বেডের জন্য নির্ধারিত সবজি বিন্যাস অনুসরণ করতে হবে। কালিকাপুর মডেল অনুসারে বাড়ির পতিত জায়গায় ৫টি বেড তৈরি করতে হবে। নির্বাচিত জমিতে ৫ মিটার (১৬ ফুট) লম্বা ও ৮০ সেন্টিমিটার (৩২ ইঞ্চি) চওড়া ৫টি বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ২ বেডের মাঝে ২৫ সেমি. (১০ ইঞ্চি) নালা রাখতে হবে। বাগানের যে দিকটা লম্বায় বড় সে দিকটি প্লটের দৈর্ঘ্য হিসেবে ধরে নিয়ে বাগানের নকশা করতে হবে। এ মডেলে জায়গার পরিমাণ, বেড ও সবজির সংখ্যা বাড়লেও অন্যান্য মাপ একই থাকবে। বাগানের জন্য চিহ্নিত জায়গার আবর্জনা পরিষ্কার করে নিতে হবে। বেড়া দেওয়ার স্থানের ভেতরে চারপাশে জায়গা খালি রেখে নকশা অনুসারে চারদিকে ২৫-৫০ সেমি. (১০-২০ ইঞ্চি) নালা ও দুই বেডের মাঝখানে ২৫ সেমি, (১০ ইঞ্চি) নালা তৈরি করতে হবে। নালার মাটি বেডগুলোতে তুলে দিতে হবে।

বিভিন্ন সবজির পাতায় দাগ রোগের জন্য সাদিদ ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ফিদা ৭৫ ডব্লিউডিজি প্রতি লিটারে পানিতে ০.৫ গ্রাম হারে স্প্রে করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বাঁধাকপি, ফুলকপির খাদক পোকা দমনের জন্য সাহাম ৫ এসজি অথবা হিমাম ৫০ ডব্লিউডিজি কার্যকরী কীটনাশক। খাদক পোকা দমনে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম সাহাম ৫ এসজি অথবা ০.২৫ গ্রাম হিমাম ৫০ ডব্লিউডিজি ব্যবহার করতে হবে। বেগুন, ঢেঁড়শ-এর ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য হিমাম ৫০ ডব্লিউডিজি ১৬ লিটার পানিতে ৪ গ্রাম, টমেটো ও মরিচ-এর ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য জাহিম ৫৫ ইসি, হিমাম ৫০ ডব্লিউডিজি এক সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি এবং ০.২৫ গ্রাম হারে প্রয়োগ করলে পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। রসুন, পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ দমনের জন্য হামা ৫২.৫ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পনিতে ১.৫ গ্রাম এবং শোষক পোকা দমনের জন্য আকিল ২৩ ডব্লিউডিজি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে।

বিভিন্ন সবজির অ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমনের জন্য ছাবাত ৫০ ডব্লিউডিজি ও তারেদ ২৮০ এসসি একত্রে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম এবং ০.৫ মিলি হারে ব্যবহার করা যায়।

পেঁয়াজ, রসুন, আলুর ফলন বৃদ্ধির জন্য পর্যায়ক্রমে প্রতি লিটার পানিতে ০.৪ গ্রাম জামাম, ২ গ্রাম টোপাজ চিলেটেড প্লাস, ০.৫ মিলি নাশাত এবং ৩০ লিটার পানিতে ১ গ্রাম জাদা ব্যবহার করতে হবে।

কালিকাপুর মডেল অনুসারে বাড়ির পতিত জায়গা যথাযথভাবে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সারা বছর পারিবারিক শাকসবজির চাহিদা মেটানো যাবে এমন সবজি বিন্যাস করতে হবে। বছরব্যাপী ৮ থেকে ১৪ রকমের শাকসবজি অনায়াসে চাষ করা যায়। বেড বা সবজির সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, এটি একটি মডেল। এ মডেল হুবহু অনুসরণ করতে হবে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। পারিবারিক চাহিদা, বাজারমূল্য, আবহাওয়া, স্থান, মাটির ধরন ও রুচি অনুযায়ী শাকসবজি নির্বাচন করতে হবে। তাহলে এ মডেলে কাঙ্খিত পরিবর্তন আনা সম্ভব।

নিচে কালিকাপুর মডেলের একটি মৌসুম ভিত্তিক শাক-সবজির তালিকা দেওয়া হলোঃ
মৌসুম রবি, খরিপ-১, খরিপ-২
ক) ১ম বেড মূলা/লালশাক/গিমা কলমি
খ) ২য় বেড বাঁধাকপি/ডাঁটা পিয়াজ
গ) ৩য় বেড বেগুন+লালশাক/পালংশাক/পুঁইশাক
ঘ) ৪র্থ বেড টমেটো-বাটিশাক/ঢেঁড়স/লালশাক
৬) ৫ম বেড রসুন/পাটশাক ঢেঁড়স

জয় সেন শুভ্র
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
মধুখালী ফরিদপুর।